শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন

শিশুকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলুন

শিশুকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলুন

অপির্তা দত্ত : সন্তানের জীবনে লক্ষ্য স্থির করতে বাবা-মায়ের ভূমিকা অনেক। কী করে আপনার সন্তানকে দায়িত্ববান, কর্মঠ ও সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তুলবেন জেনে নিন। জানালেন অপির্তা দত্ত
একটু বড় হলেই শিশুদের মধ্যে সক্রিয়তা বাড়ে। অনেক কাজ করার বাসনা জাগে তাদের। বড়দের মতো কাজ করতে চায়, স্বাধীনতা চায়। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা একটু গুরুত্ব দিলেই শিশুটি স্বনির্ভর হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। এ বয়সে ঘরের কাজে তাকে অভ্যস্ত করা গেলে ছোটবেলা থেকে স্বাবলম্বী তো বটেই, তার দায়িত্ববোধের বিষয়টিও নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে নিজের কাজ নিজে করার প্রবণতা গড়ে উঠবে শিশুটির মধ্যে। কর্মব্যস্ত বাবা-মাও খানিকটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। এই শিশুরা বড় হওয়ার পর সাফল্যও পায় বেশি।
ছোট থেকে শিশুরা ঘরের কাজে অভ্যস্ত হলে তারা দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে ওঠে। এটি ভবিষ্যতে তাদের যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
দায়িত্ব নিতে শেখানো হলে কাজের পরিণতি বা ফলাফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবে শিশু। যেমনথ কোনো শিশুকে বিছানা গোছানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো। কোনো কারণে সে ভুলে গেছে বিছানা গোছাতে। রাতে এই অগোছালো বিছানাতেই শুতে হবে। এরপর থেকে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নিজের বিছানা পরিপাটি করে রাখবে শিশুটি। সেই সঙ্গে কোনো কাজের ফলাফল নিয়েও ভাবতে শিখবে।
আজকের যুগে বেশির ভাগ পরিবারই ছোট পরিবার। বাবা-মা দুজনকেই কাজের খাতিরে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকতে হয়। সন্তানের দিকে সেভাবে নজর দেওয়া হয়ে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে কাজের লোকই ভরসা। তবে তাদের ওপর ভরসা করাটাও কঠিন। শিশুরা নিজের কাজটি নিজে করতে পারলে পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেওয়া যায়। ঘরের টুকিটাকি কাজে অভ্যস্ত হলে শিশুটি নিজেরও যতœ নিতে শিখবে। যেমনথ একাই খাবরটা খেয়ে নেওয়া, সময়মতো স্নান করা ও ঘুমানো।
ঘরের কাজে অভ্যস্ত শিশুরা সহানুভূতিশীল হয়ে বেড়ে ওঠে। অন্যের যতœ নিতে শেখে। অন্যকে সাহায্য করার প্রবণতা গড়ে ওঠে তার মধ্যে। নিজের মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে।
আত্মসম্মানবোধ জন্মায় শিশুদের মধ্যে। ঘরের কাজ করতে শেখা বাচ্চাদের মধ্যে লক্ষ্য ও নিজস্বতার জন্ম দেয়। পরিবারে তাদের একটা ভূমিকা আছে, সহজেই বুঝতে পারে তারা। ভালো কাজের জন্য অবশ্যই তাকে পুরস্কৃত করা উচিত।
ঘরের কাজ করে বেড়ে ওঠা শিশুদের মানসিক গঠন অনেক উন্নত হয়। পরিণত মানসিকতার কারণে তারা বড় হওয়ার পর শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে সফলতা পায় বেশি। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ ও অর্জন তাদের জন্য অনেকটা সহজ হয়। কখনো জীবন, কাজ, সম্পর্ক নিয়ে হতাশা বোধ করলেও সহজেই তা কাটিয়ে উঠতে পারে তারা।
যেকোনো সমস্যা সমাধানে দক্ষ হয়ে ওঠে। দায়িত্ব দেওয়ার আরেকটা কারণ শিশুকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেওয়া। অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও, আমাদের কাজ করতে হয়। জীবনের এটাই নিয়ম। শিশুদের ঘরের কাজ শেখানো হলে সেও বুঝতে শিখবেথ ইচ্ছা না করলেও কাজটা জরুরি।
শিশুরা সব সময় সব কাজ করতে চাইবে না। অনেক সময় কোনো কাজ করতে করতে তার একঘেয়ে লাগতে পারে। তখন তার হয়ে কাজটা করে দেওয়া উচিত নয়। করে দিলে ভাববে সে না করলেও কাজটা হয়েই যাচ্ছে। এতে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা পাবে না শিশুটি। কিন্তু নিজের কাজ নিজে করার শিক্ষা দেওয়া হলে পরবর্তী জীবনে একঘেয়ে কঠিন কাজের পেছনে লেগে থেকে করার অনুপ্রেরণা পাবে।
শিশুরা যখন নিজের কাজ নিজে করতে শিখবে তখন অন্যের কাজের ব্যপারেও শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে। তার মধ্যে শৃংঙ্খলাবোধ তৈরি হবে। শিশুরা যাতে উৎসাহ নিয়ে কাজ করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। জোর করে তাদের ওপর কাজ চাপিয়ে দেবেন না। তাহলে তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এক ধরনের অনীহা তৈরি হবে। সব সময় উৎসাহ দিন। সহযোগীতা করুন। কাজ ভালো হলে প্রশংসা করুন। আর খারাপ হলে শুধরে দিন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877